
ঢাকা অফিস ॥
শিল্প, বাণিজ্য ও রপ্তানি খাতের মতো প্রতিবছর কৃষি খাতেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ঘোষণার জন্য নীতিমালা জারি করেছে সরকার। এ ক্ষেত্রে সম্মাননা দেওয়া হবে কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা এআইপি নামে। প্রতিবছর পাঁচটি বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫ জনকে এআইপি ঘোষণা করা হবে। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা এআইপি নীতিমালা জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, কৃষিবিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা, উৎপাদনকারী, বাণিজ্যিক কৃষি খামার স্থাপনকারী, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী ও কৃষি সংগঠকদের মধ্য থেকে সরকার প্রতিবছর কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নির্বাচিত এআইপিদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। নির্বাচিতরা এআইপি কার্ডের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের প্রশংসাপত্র পাবেন। এক বছরের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবেন তারা। যেমন- বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের পাস, বিভিন্ন জাতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ, বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণে সরকার পরিচালিত গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণে অগ্রাধিকার, নিজের ও পরিবারের সদস্যদের সরকারি হাসপাতালের কেবিন প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার, বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা ইত্যাদি।
পাঁচটি বিভাগের মধ্যে প্রতিবছর কৃষির জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সর্বোচ্চ ১০ জন, কৃষি উৎপাদন বা বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে সর্বোচ্চ ১৫ জন, রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদনে সর্বোচ্চ ১০ জন, স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত কৃষি সংগঠনে সর্বোচ্চ পাঁচজন এবং বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদক প্রাপ্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচজনকে এআইপি ঘোষণা করা হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, কৃষি উদ্ভাবনে এআইপি থেকে আবেদনকারীকে যেসব কৃষিপণ্যের নতুন জাত ও প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন ও উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট হতে হবে সেগুলো হচ্ছে- ধান, গম, ভুট্টা, ডাল, তেল বীজসহ সব ধরনের দানাদার শস্য, শাকসবজি, ফলমূল, ফুল, কন্দাল ফসল, মসলা, তুলা, আখ ও পাট এবং মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও বন উপখাতভুক্ত কৃষি সংশ্নিষ্ট নতুন জাত, প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি। জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা বা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কৃষিতে অসামান্য কৃতিত্ব অর্জন করেছেন- এমন গবেষক, বিজ্ঞানী বা শিক্ষাবিদও এ সম্মাননা পেতে পারেন।
কৃষি উৎপাদন বা বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ক্যাটাগরিতে আবেদনকারীকে মোট ফসল, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, বনজসম্পদ উৎপাদনের পরিমাণ, সংখ্যা, আবাদ করা জমির পরিমাণ, খামারের আয়তন, ফলন, উৎপাদন খরচ, বিনিয়োগ ও লাভের তথ্য দিতে হবে। রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদনে এআইপি হওয়ার জন্য ফসল, মৎস্য, প্রাণী ও বনজসম্পদ উপখাতের শুধুমাত্র রপ্তানিমুখী কৃষিপণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত কৃষকরা আবেদন করতে পারবেন।
স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত কৃষি সংগঠন ক্যাটাগরিতে সরকারি কর্মচারী ছাড়া কৃষি পেশাজীবী সংগঠক, কৃষি ব্যবসায়ী সংগঠক, কৃষি সংশ্নিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের মনোনীত সদস্যদের মধ্য থেকে এআইপি নির্বাচন করা হবে। এ ছাড়া যে বছরের জন্য এআইপির আবেদন আহ্বান করা হবে, তার আগের বছরে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শুধুমাত্র কৃষকরা এআইপি হিসেবে নির্বাচিত হবেন।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিবছর এআইপি নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন আহ্বান করে প্রচার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তাতে আবেদনের নিয়ম-কানুন ও অন্যান্য বিষয় দেওয়া থাকবে। এআইপি নির্বাচনের জন্য উপজেলা, জেলা, প্রাথমিক বাছাই ও চূড়ান্ত বাছাই কমিটি থাকবে। চূড়ান্ত বাছাই কমিটির সভাপতি হবেন কৃষি সচিব। এতে সরকারের সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তারাও থাকবেন।