Follow us on
Download the latest Anandabazar app
© 2021 ABP Pvt. Ltd.
১১ মে ২০২২ ই-পেপার
এ রাজ্যের অধিকাংশ কৃষকের কাছে ধানই প্রধান চাষ। কিন্তু ধানের শীষ বেরোনোর সময় এলেই ভয়ে থাকেন চাষি। প্রায়ই দেখা যায়, ধানগাছের পাতা খয়েরি হয়ে যা
এ রাজ্যের অধিকাংশ কৃষকের কাছে ধানই প্রধান চাষ। কিন্তু ধানের শীষ বেরোনোর সময় এলেই ভয়ে থাকেন চাষি। প্রায়ই দেখা যায়, ধানগাছের পাতা খয়েরি হয়ে যাচ্ছে। ছোপ ছোপ দেখা যাচ্ছে। কখনও বা পাশকাঠি ছাড়ে না। কখনও আবার দেখা যায়, গাছগুলো বাড়ছে না, বেঁটে রয়ে যাচ্ছে। শীষের ভিতর দানা নেই।
অনেক চাষি ভাবেন, এ হয়তো কোনও রোগ। তাই তাঁরা কীটনাশক অথবা রোগনাশক ওষুধ দেন। কিন্তু তাতে লাভ হয় না।
সমস্যাটা আসলে অণুখাদ্যের অভাব, জানান কৃষিবিজ্ঞানী সুব্রত মণ্ডল। শ্রীনিকেতনের কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের কৃষি বিশেষজ্ঞ সুব্রতবাবু জানান, শুধু ধানই নয়, যে কোনও ফসলে দ্বিগুণ মুনাফা দিতে পারে অণুখাদ্য। তাঁর মতে, জমি থেকে বারবার ফসল তোলার ফলে মাটিতে জিঙ্ক, বোরন-সহ নানা অণুখাদ্যের পরিমাণ কমে যায়। বোরনের অভাবে গাছ বেঁটে হয়, বাড়ে না। ধানের শীষ চিটে (ফাঁপা) হয়, ভিতরে দানা থাকে না। অনেক সময়ে সমস্ত ধান ফোলেও না। জিঙ্কের অভাব থাকলে ধান পোঁতার ২০ দিনের মধ্যে ধানগাছের নিচের পাতাগুলোয় খয়েরি ছোপ ছোপ দেখা যায়।
কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত চাষিদের জমিতে গত তিন বছর পরীক্ষামূলক প্রয়োগে দেখা গিয়েছে, ফসলে অণুখাদ্যের অভাবে ৪০ শতাংশ ফলন কম হয়। অণুখাদ্য দিলে বিঘে প্রতি গড়ে ৬ কুইন্টাল ধান উৎপাদন হবে। অন্য দিকে, অণুখাদ্যের অভাবে বিঘে পিছু গড়ে ৩ থেকে ৪ কুইন্টাল ফসল হবে।
বোলপুর থানার দুর্গাপুরের বাসিন্দা দিলীপ দলুই বলেন, ‘‘গত বছর ধানগাছে খয়েরি ছোপছোপ দেখে মনে হয়েছিল ঝলসা রোগ হয়েছে। ঝলসার ওষুধ দিই, কোনও লাভ হয়নি। পরীক্ষামূলক ভাবে জিঙ্কের প্রয়োগের পর এ বার প্রায় ডবল ফসল পেয়েছি।’’
কী ভাবে দিতে হয় অণুখাদ্য? জিঙ্কের অভাব বুঝলে প্রতি ড্রামে (১৫ লিটার জল) সাড়ে সাত গ্রাম চিলেটেড জিঙ্ক দিতে হবে। আবার ৩৫-৪০ দিনের মাথায় গাছের বৃদ্ধি কমা, পাশকাঠি না ছাড়া দেখলেই বুঝতে হবে বোরনের অভাব। তখন বোরন-২০ দিতে হবে, প্রতি ড্রামে ৩০ গ্রাম পরিমাণে।
সুব্রতবাবুর পরামর্শ, ধান পোঁতার ৫-৭ দিন আগে বিঘে প্রতি ৪০ কেজি চুন দিতে হয়। ধান পোঁতার ২৫ এবং ৪৫ দিনের মাথায় দু’বার জিঙ্ক, বোরন ও মলিবডেনামের অণুখাদ্য মিশ্রণ দিতে হবে। এই মিশ্রণ
বাজারে পাওয়া যায়। এক লিটার জলে আড়াই গ্রাম অনুপাতে ফসলে স্প্রে করতে হয়।
কোনও কোনও ক্ষেত্রে অণুখাদ্য মাটিতেও দেওয়া হয়। তবে সে ক্ষেত্রে মাটি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা দরকার। কারণ অণুখাদ্য পরিমাণে সামান্য বেশি হয়ে গেলে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বোলপুরের দুর্গাপুরের দিলীপ দলুই, কার্ত্তিকডাঙ্গার যোগেন ঘোষ, কাঁকুটিয়ার আব্দুল মাজিদ এবং বিষ্ণুবাটীর তপন ঘোষেরা ফসলে অণুখাদ্য দিয়ে লাভবান হয়েছেন। তাঁদের দাবি, নিয়ম মেনে পরিমাণ মতো অণুখাদ্য দিলে অন্তত ২০ শতাংশ বেশি উৎপাদন অবধারিত।
সুব্রত মণ্ডল,
কৃষি বিশেষজ্ঞ,
রথীন্দ্র কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র
জিঙ্কের অভাব থাকলে ধানগাছের নীচের পাতাগুলোয় খয়েরি ছোপ ছোপ দেখা যায়।
গাছের বৃদ্ধি কম, পাশকাঠি ছাড়ছে না, শীষ ফাঁপা দেখলে বুঝতে হবে বোরনের অভাব হয়েছে।
পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, জিঙ্ক, বোরনের মতো অণুখাদ্যের অভাবে ৪০ শতাংশ ফলন কম হয়। অণুখাদ্য দিলে বিঘে প্রতি ৬ কুইন্টাল ধান উৎপাদন হবে।
© 2021 ABP Pvt. Ltd.