(প্রিয়.কম) ধান বাংলাদেশের প্রধান ফসল। ধান উৎপাদনে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। যদিও আয়তনে দেশটি অনেক ছোট। তদুপরি দিনে দিনে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা কমে আসছে আশঙ্কাজনক হারে। অপরপক্ষে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আবাস্থল তৈরিতে কমে আসছে কৃষি জমির পরিমাণ। ফলে দ্বিমুখী সমস্যায় আছে আমাদের জাতি ও ভবিষ্যৎ। একদিকে যেমন জনসংখ্যা বাড়ছে, অপরদিকে কমে আসছে কৃষি জমি। শিক্ষিত তরুণরা নিয়মিত দূরে সরে আসছে কৃষি কাজ থেকে, ফলে কৃষি, তথা ধানের উৎপাদন ক্রমাগত হারে হুমকির মুখে চলে যাচ্ছে।
এ সকল সমস্যার কথা পরিকল্পনায় রেখে বাংলাদেশে শুরু হয় কৃষিতে যান্ত্রিকতা। যেহেতু ধান আমাদের প্রধান ফসল, তাই এর উৎপাদন বৃদ্ধি করা ও এতে শ্রম কমানোই কৃষিতে যান্ত্রিকতার প্রধান লক্ষ্য। ধান উৎপাদনের অন্যতম প্রধান ধাপগুলো হল ১০টি- জমি তৈরি, সেচ, চারা রোপণ, আগাছা নিধন, ধান গাছ কর্তন, ধান মাড়াই, ধান ঝাড়াই, ধান পরিবহন, ধান শুকানো ও সংরক্ষণ।
বাস্তবিকভাবে প্রতিটি ধাপ-ই শুধু শারীরিক শ্রম নয়, ফলন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কৃষি যান্ত্রিকতায় বর্তমানে বাংলাদেশ এ জমি তৈরি, সেচ,আগাছা নিধন, ধান গাছ কর্তন, ধান মাড়াই, ধান ঝাড়াই, ধান পরিবহন– এই ধাপগুলোতে বেশ সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সেচের ক্ষেত্রে সকল জমিই এখন যান্ত্রিকতার আওতাধীন। বর্তমানে দেশের সকল কৃষক সেচের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার পাম্প, ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করে থাকেন। বর্তমানে সোলার পাম্পও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। চাষের ক্ষেত্রে পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টরের ব্যবহার এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। কৃষক এখন আর লাঙ্গল জোয়াল নিয়ে জমি প্রস্তুত করে না। ধানের জমিতে আগাছা নিধনের জন্য বহুল জনপ্রিয় এখন বিভিন্ন ধরনের উইডার।
ফসলের মাঠে কৃষক লাঙল দিয়ে জমি চাষ করছে। ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে ধান চাষে সবচেয়ে বড় অন্তরায় বা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকট। যার সমাধান হিসেবে বর্তমানে রিপার, কম্বাইন হারভেস্টার ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। এই যন্ত্রগুলো জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রয়াস সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
শ্রমিক সংকটের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ধানে চারা রোপণের মৌসুম। এই ক্ষেত্রে আধুনিক বিশ্বে যে প্রযুক্তি সর্বাধিক প্রচলিত, সেটি আত্মস্থ করার ব্যাপারে এখনো আমরা পিছিয়ে আছি যোজন যোজন। আর এই প্রযুক্তিটি হচ্ছে রাইস রান্সপ্লান্টার। এই প্রযুক্তির ব্যবহারে উদ্ভুদ্ধকরণে বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশের মানুষকে দ্রুত শিখে নিতে হবে আধুনিক পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদন। আধুনিক পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদনের ফলে অল্প বয়সী চারাকে সুস্থ্য শিকরসমেত রাইস রান্সপ্লান্টার দ্বারা রোপণ করা যায়। এতে ফলন বাড়ে প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। প্রচলিত পদ্ধতিতে চারা রোপণের ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিকের কাজ মাত্র দুই জন শ্রমিক দ্বারা ১০ ভাগের এক ভাগ সময়ে করা যায়।
এই সকল প্রযুক্তি জনপ্রিয় করতে ও এগুলোর সুফলগুলো প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে এগিয়ে আসতে হবে তরুণ সমাজকে। গ্রামে গ্রামে যুব সংঘগুলোকে শুধু খেলাতে সীমাবদ্ধ না রেখে কৃষিকাজকে তথা কৃষি যান্ত্রিকতাকে ত্বরান্বিত করায় সক্রিয় ভুমিকা রাখতে হবে। আমরা বর্তমানে ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। উৎপাদন আরও বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা চাল রপ্তানিতে চলে যেতে পারি ও বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে অগ্রণী ভুমিকা রাখতে পারি।
প্রিয় প্রযুক্তি/কামরুল
© ২০২২ প্রিয় ॥ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত