
আমিষ ডেস্ক ॥
হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর খেয়ে না খেয়ে ফসল ফলান কৃষক। সেই ফসলই মধ্যস্বত্বভোগীর হাত ধরে বিক্রি হয় বাজারে, খাবার জোটে সবার ঘরে। কিন্তু যে কৃষকের শ্রমের ফসল ভোগ করে বিশ্বজুড়ে ভোক্তারা, সেই কৃষক কতটা বিনিময় পান? অনলাইন জার্নাল ন্যাচার ফুডের এক জরিপে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে ভোক্তারা মুদি দোকানে যা খরচ করে কৃষক পান তার মাত্র চার ভাগের এক ভাগ। বাকি অর্থ যায় মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে।
ন্যাচার ফুডের মতে, কৃষক তাঁর ন্যায্য হিস্যা পান কি না এর বাইরেও প্রশ্ন থেকে যায় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা থেকে শুরু করে এ জাতীয় শিল্প-কারখানাগুলো টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে কতটা সংগতিপূর্ণ। এই গবেষণার সিনিয়র রচয়িতা ও কর্নেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্রিস ব্যারেট বলেন, ‘আমরা আমাদের খাবারের পেছনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করি তা কিন্তু সরাসরি ফিজিক্যাল খাবারে নয়, বরং খবারে বেশির ভাগ মূল্য সংযোজন ঘটে প্রক্রিয়াজাতকরণ, ম্যানুফ্যাকচারিং, বিতরণ এবং সেবায়, যা খাবারকে ভোক্তার পছন্দসই করে দেয় এবং কাছাকাছি নিয়ে আসে। নানা ভাগে বিভক্ত এই ভ্যালু চেইনের ফলেই কর্মসংস্থান তৈরি হয় এবং খাবার সুবিধাজনক হয়। সেই খাবারই আমরা মিল বা ফ্রোজেন ফুড আকারে বা সুপারশপে প্যাকেটজাত অবস্থায় পাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু ভোক্তার এই সুবিধার বিপরীতে স্বাস্থ্যগত এবং পরিবেশগত দিক থেকে এর কী প্রভাব পড়ে সেটিও দেখা উচিত। যেমন খাবার প্রক্রিয়াকরণের ধাপে ধাপে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন, দূষণ ইত্যাদি হয়। এর পাশাপাশি আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এসব খাবারে প্রত্যাশিত পুষ্টিগুণ-মিনারেল, ভিটামিন ও ফাইবার কতটুকু অবশিষ্ট থাকে এবং অপ্রত্যাশিত উপাদান- খারাপ ফ্যাট, লবণ, চিনি ইত্যাদি যোগ হয়।’ তিনি বলেন, ‘তাই খাদ্য ভ্যালু চেইনের সঙ্গে সর্বসাধারণের স্বাস্থ্যগত বিষয় গুরুত্বপূর্ণভাবে জড়িত।’ কৃষক ও ভোক্তার মাঝে যে ভ্যালু চেইন রয়েছে তার গুরুত্ব মূল্যায়নের জন্য ন্যাচার ফুড এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে। তাতে ৬১টি মধ্যম এবং উচ্চ আয়ের দেশের ২০০৫ থেকে ২০১৫ সালের ডাটা ব্যবহার করা হয়। বিশ্ব খাদ্য অর্থনীতির ৯০ শতাংশ এই দেশগুলোর আওতায়। জরিপে দেখা যায়, ভোক্তারা বাসায় যে খাবার খায় তার বিপরীতে যে অর্থ পরিশোধ করে কৃষক পান তার মাত্র ২৭ শতাংশ। এমনকি অনেক খাবারের ক্ষেত্রে কৃষক আরো কম পান। অর্থাৎ খাবারে যে অর্থ ব্যয় হয় তার বড় অংশই যায় উৎপাদন-পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণ ধাপগুলোতে। এএফপি।