
যশোর অফিস ॥
আবাদ মৌসুমের শেষভাগে এসে সময়মতো ফসল ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা ধান চাষীদের এখন সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা। কারণ লকডাউনে ধান কাটা শ্রমিক সঙ্কটের আশঙ্কা করছেন তারা। আর এর মধ্যে কঠোর লকডাউন তাদের এই দুশ্চিন্তা আরও বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। শ্রমিক সঙ্কটে ঠিক সময়ে ধান কাটতে না পারলে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিতে নষ্টের আশঙ্কা করছেন চাষীরা। ফলে মাঠে পাকা ধান নিয়ে চলছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
চাষীরা বলছেন, মাঠের বোরো ধানে পাক ধরেছে। আর শীঘ্রই এই ধান কাটা শুরু করতে হবে। ইতোমধ্যে আগাম ধানের কর্তন শুরু হয়েছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক আসা বন্ধ রয়েছে। ফলে স্থানীয়ভাবে শ্রমিক সংগ্রহ করে ফসল ঘরে তোলার মতন বৃহৎ এই কর্মযজ্ঞ সামলানো দুরূহ হবে বলে মনে করছেন তারা। আর এই বিষয়টি তাদের রীতিমতন ভাবিয়ে তুলেছে। তাই চাষীদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার রেখা।
তবে জেলার কৃষি বিভাগ বলছে, ধান কাটা নিয়ে চাষীদের উৎকণ্ঠিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কৃষি শ্রমিকরা জরুরী সেবা আওতার মধ্যে থাকায় তারা এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ধান কাটতে যেতে পারবেন। তারপরও রিপার ও হারভেস্টারের (কর্তন-মাড়াই ও ঝাড়াই যন্ত্র) ব্যবস্থা রাখা আছে। প্রয়োজনে সেগুলো দিয়ে ধান কেটে দেয়া হবে। বিভাগটির কর্তাব্যক্তিদের ভাষ্য মতে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে তাদের জানানো হয়েছে যে কৃষি শ্রমিক পরিবহনে কোন বাধা থাকছে না। বিশেষ বাস বা ট্রাকে করে তারা এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ধান কাটতে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে কৃষি শ্রমিকরা জরুরী সেবার আওতায় থাকায় তাদের চলাচলে বাধাপ্রাপ্ত হবে না। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা ধান কাটায় অংশ নিতে পারবে।
এদিকে আলাপচারিতায় যশোরের চাষীরা বলছেন, ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া না পাওয়া নিয়ে তারা দুর্ভাবনায় পড়েছেন। বিশেষ করে ‘কঠোর লকডাউন তাদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তুলেছে। সদরের ভাতুড়িয়া এলাকার কৃষক আতাউর রহমান বলেন, এবার তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে তার ক্ষেতের ধানে পাক ধরেছে। তার ভাষ্য মতে, আর দিন কয়েকের মধ্যে মাঠের ধানে কাঁস্তের পোচ বসাতে হবে। কিন্তু প্রয়োজনমাফিক ধান কাটার মজুর পাবেন কিনা সেটি নিয়ে সংশয়ে আছেন। তার ধারণা, লকডাউন কঠোর হলে বাইরে থেকে শ্রমিক আসতে পারবেন না। আর পরিস্থিতি এমন হলে ফসল ঘরে তোলা কঠিন হয়ে যাবে। মণিরামপুর উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের বাগডোব এলাকার কৃষক রিপন হোসেন জানান, তার মাঠের ধান অধিকাংশ পেকে গেছে। এবছর তিনি চার বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ফি-বছর সাতক্ষীরাসহ দেশের অন্য জেলা থেকে ধান কাটার শ্রমিক আসে। কিন্তু গতবার করোনার সংক্রমণের কারণে এই শ্রমিক আসায় বিঘœ ঘটে। আর এবারও সেই একই ঘটনা। ফলে শ্রমিক সঙ্কটে সময়মতো মাঠের ধান কাটা না গেলে ঝড়-বৃষ্টিতে নষ্ট হবার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ যশোর অফিস সূত্র বলছে, ধান কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াইয়ের জন্য জেলায় ৩১টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার রয়েছে। দরকার পড়লে এগুলো দিয়ে চাষীদের ধান কেটে ঘরে তুলতে সহায়তা করা হবে। এক্ষেত্রে চাষী প্রতি ২ হাজার ২শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকার মতন খরচ পড়বে। সূত্র বলছে, ভর্তুকি দামে যাদের এই হারভেস্টার দেয়া হয়েছে সঙ্কটের এই সময়ে তারা খরচের বিনিময়ে অন্যদের ধান ঘরে তোলায় সহায়তা করবেন।
কৃষি প্রকৌশলী সুজাউল হক জানান, ভর্তুকিতে এবছরও জেলায় ২০টি হার্ভেস্টার দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬টি হস্তান্তরও হয়েছে। পর্যায়েক্রমে অন্যগুলো দেয়া হবে। তিনি জানান, গত বছর ভর্তুকি দিয়ে ২৫টি ও এবছরে ৬টি সব মিলিয়ে ৩১টি হার্ভেস্টার মাঠে রয়েছে। যেগুলোর সহায়তায় অন্যরা তাদের ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস যশোরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানিয়েছেন, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারী নির্দেশনার আলোকে চাষীদের মাঠের ধান কাটার সব রকমের বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে। আর এক্ষেত্রে কোনরকম সমস্যা হলে চাষীদের সহায়তায় এগিয়ে যাবে কৃষিবিভাগ। যশোরের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, সবুজ ধানশস্যে হলুদের আভা লেগেছে। চৈতালি বাতাসে দুলছে পুষ্ট ধানের শীষ। শীষের গায়ে শীষ লেগে বাতাসে অদ্ভুত ধ্বনি তুলছে। আর এমন পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে অচিরেই ধান কাটা শুরু হতে চলেছে। দেখা গেছে, ইতোমধ্যে অনেক মাঠে শুরু হয়েছে ধান কাটাও। কৃষি সম্প্রসারণ যশোর অফিস সূত্র জানিয়েছে, জেলার ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে এবার বোরোর আবাদ হয়েছে। আর এবারের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার হেক্টর।