
রোকন মাহমুদ ॥
গত বছর করোনাসহ নানা কারণে আলুর দামে রেকর্ড হয়েছিল। অতিরিক্ত দামের ফলে ভোক্তাসাধারণের পাশাপাশি সরকারও পড়ে বিপাকে। আলু নিয়ে টালমাটাল পরিস্থিতি সামলাতে দাম বেঁধে দিয়েও স্থিতিশীল করা যায়নি বাজার। চলতি বছর আর সরকার সেই পরিস্থিতি তৈরি হতে দিতে চায় না। ফলে এবার আগেভাগেই নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। আলুর মূল্য সংগ্রহ, উৎপাদন তথ্য সংগ্রহ, কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের সঙ্গে বৈঠকএ ধরনের নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সংস্থাটি। অবশ্য কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা বলছেন, আলু নিয়ে এবার দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এবার আলুর উৎপাদন ১০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি হতে পারে, যা চাহিদার তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে গত মৌসুমে প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়েছিল আট টাকা ৩২ পয়সা। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে হিমাগারে সংরক্ষণ খরচ হয়েছে ১৪ টাকা। সব খরচ মিলিয়ে এক কেজি আলুর দাম দাঁড়ায় ১৯ টাকা। গত বছরের আগস্টে এই আলু দেশের খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছিল ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ টাকা কেজি। নভেম্বরে আলুর কেজি ৩৫ টাকা বেঁধে দিয়েও দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত আলুর কেজি বেড়ে হয় ৬০ টাকা। করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য সহায়তায় এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহায়তায় দেওয়া হয়েছিল আলু। চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও বাড়তে থাকে। অবশ্য বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। মৌসুমজুড়ে আলুর বাজারে নজরদারি বাড়াতে গত রবিবার হিমাগার মালিকদের নিয়ে বৈঠক করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। ওই বৈঠকে হিমাগার মালিকদের একটি ফরম দেওয়া হয়েছে। ওই ফরমে আলু সংরক্ষণে কোল্ড স্টোরেজের সংখ্যা, মোট ধারণক্ষমতা, হিমাগারে সংরক্ষণের তথ্য, কী পরিমাণ আলু খাওয়া হচ্ছে, বীজ আলুর পরিমাণই বা কতএসব তথ্য চাওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় পর পর হিমাগার মালিকদের কাছ থেকে ওই ছকে তথ্য সংগ্রহ করবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। পরে সেগুলো তারা পাঠিয়ে দেবে মাঠপর্যায়ে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোশারফ হোসেন ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ইউসুফসহ অন্য কর্মকর্তারা। মাঠপর্যায়ের তথ্যে দেখা যায়, উত্তরবঙ্গে হিমাগারে আলু তোলা শুরু হয় ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে। মুন্সীগঞ্জে হিমাগারে আলু তোলা শুরু হয় মার্চে। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশেনের তথ্য মতে, দেশে মোট ৩৬৯টি হিমাগারে আলুর ধারণক্ষমতা ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর উৎপাদিত হয়েছিল ৯০ লাখ টন, হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছিল ৪০ লাখ টন। হিমাগার মালিকরা বলছেন, গত বছর কৃষকরা ভালো দাম পাওয়ায় এবার আলুর চাষ বাড়িয়েছেন। এবার শ্রমিক সংকট নেই, আবহাওয়াও ভালো। ফলে এবার আলুর উৎপাদন কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে। দেশে আলুর চাহিদা রয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ লাখ টন। অর্থাৎ এবার চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হবে ৮ শতাংশ। ফলে আলু নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আলু সংরক্ষণ নিয়ে এর আগে কখনো এমন বৈঠক হয়নি। অধিদপ্তর আমাদের কাছে তথ্য চেয়েছে, আমরা দেব। তবে বাজার স্বাভাবিক রাখতে সমন্বয় জরুরি। কৃষি সম্প্রসারণ, বিপণন ও সরকারের বিভিন্ন পক্ষ একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এসব বিষয়ে আমরা সুপারিশ করেছি। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিলের রেয়াত, প্রণোদনার অর্থ থেকে ঋণ, সরকারি ত্রাণে আলু রাখা, রপ্তানির নতুন বাজার খোঁজার দাবিও জানিয়েছি।’ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ইউসুফ বলেন, ‘আমরা একটি প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করেছি। বাজার যাতে আর অস্থির না হয় সেসব নিয়ে কথা বলেছি। এ জন্য এবার আমরা পূর্বপ্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি।’