
ঈদের দুই দিন আগে ইলিশের পাঁচটি অভয়াশ্রমে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে যাচ্ছে। এতে জেলেদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। আজ শনিবার মধ্যরাতে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। এর পর থেকে জাল-নৌকা নিয়ে জেলেরা নদ-নদীতে নামতে পারবেন।
নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা শেষ হতে যাওয়ায় কয়েক দিন ধরে জেলেরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তাঁরা আশায় বুক বেঁধে আছেন, শুরুতেই ইলিশের দেখা পাবেন। পরিবার নিয়ে ঈদের আনন্দে শামিল হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
দেশের ইলিশের ছয় অভয়াশ্রমের মধ্যে পাঁচটিতে সব ধরণের মাছ ধরার ওপর ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সরকার। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা–সংলগ্ন আন্ধারমানিক নদের ৪০ কিলোমিটার আয়তনের অভয়াশ্রমটি এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই। এখানে গত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর—দুই মাস নিষেধাজ্ঞা ছিল। মাছের প্রজননকাল, চলাচলের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে ওই অভয়াশ্রমে প্রতিবছর আগেভাগেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
অভয়ারণ্য এলাকায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে এসব অভয়াশ্রমের আশপাশের এলাকার কয়েক লাখ জেলে বেকার হয়ে পড়েন। সরকার এই সময়ে ৪০ কেজি করে চাল সহায়তা দিলেও তা অপ্রতুল।
ভোলার দৌলতখান উপজেলার জেলে ইব্রাহিম মাঝি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার দুই মাস আমরা নদীতে জাল ফেলি নাই। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর প্ররোচনায় কিছু জেলে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাছ ধরেছে। চাপিলা বলে এসব ছোট জাটকা ইলিশ বাজারে বিক্রিও করেছে। ক্ষুধার কাছে কিছু জেলে এসব করতে বাধ্য হয়েছে।’
ঈদের আগে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় নিজের স্বস্তির কথা তুলে ধরেন এই প্রান্তিক জেলে। তিনি বলেন, ‘মাছ-পোনা পাইলে অন্তত বউ-বাচ্চা নিয়া ঈদের সেমাই-নাস্তা খাওন যাইবে, নাইলেও তো তাও খাওনের উপায় আছিলো না।’
বরিশালের মেঘনা তীরবর্তী হিজলা উপজেলার বড়জালিয়া, হিজলা-গৌরব্দী, ধুলখোলা, মেমানিয়া, হরিনাথপুর— এ ছয়টি ইউনিয়ন মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত। মাছ ধরেই এখানকার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। দুই মাসের নিষেধাজ্ঞায় এসব এলাকার জেলেরা মানবেতর দিন পার করেছেন। হিজলা-গৌরবদীর জেলেরা বলেন, গত দুই মাসের নিষেধাজ্ঞায় পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে খুব কষ্ট হয়েছে। ঈদের এখনও দুইদিন বাকি আছে। নিষেধাজ্ঞার ওঠার পর কিছু টাকা আয় হলে ঈদ ভালোভাবে কাটবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সরকার জাটকা নিধন রোধে ২০০৬ সালে দেশের অভয়াশ্রমগুলোতে নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম শুরু করে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এবারও মার্চ থেকে এপ্রিল—এই দুই মাস অভয়াশ্রমগুলোয় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে প্রতিবছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা (১০ ইঞ্চির চেয়ে ছোট ইলিশ) ধরা, পরিবহন ও বিক্রি নিষিদ্ধ থাকে। এ মৌসুমেও একইভাবে গত বছরের নভেম্বর থেকে চলছে নিষেধাজ্ঞা, যা থাকবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পাঁচ অভয়াশ্রমে নতুন করে সব ধরনের ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এ ছাড়া গত বছরই প্রথম সব ধরনের মাছের উৎপাদন বাড়াতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সরকার। আগে এ নিষেধাজ্ঞা কেবল দেশের বাণিজ্যিক ফিশিং বোটের জন্য বলবৎ ছিল। ২০১৯ সাল থেকে সাগরে মাছ আহরণের জন্য ব্যবহৃত যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক সব ধরনের নৌযানকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়।
মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, আগে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ঘিরে পাঁচটি অভয়াশ্রম ছিল। কিন্তু ২০১৯ মালে অভয়াশ্রমের সংখ্যা আরও একটি বেড়ে ছয়টি হয়েছে।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, অভয়াশ্রমের দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা আজ মধ্যরাতে উঠে যাবে। এরপর জেলেরা পুরোদমে মাছ শিকার করতে নামতে পারবেন।