
ঠাকুরগাঁওয়ের গম চাষ করে মুখে হাসি ফুটেছে চাষিদের। গত ৬ বছরে গমের দাম ভালো না পেলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পাওয়া তাদের খুশির কারণ। এখন গম কাটা ও মারাইয়ের কাজের ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিরি এলাকাসহ কয়েকটি উপজেলায় বৃহস্পতিবার ঘুরে দেখা গেছে গম কাটা ও মারাই করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষানিরা। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে দেখা গেছে আধুনিক যন্ত্রপাতিও।
স্থানীয় কৃষক হামিদুর রহমান বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রামের কৃষকরা গমের প্রত্যাশিত দাম পায়নি। বর্তমানে বাজারে গমের দাম ভালো। তাই দেরি না করে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে গম ঘরে তোলার দৌঁড়ে আছি। এখন পর্যন্ত ৫০ মণ গম বিক্রি করে পেয়েছি ৬৫ হাজার টাকা। এখনও মাঠে যে গম আছে সেগুলো তাড়াতাড়ি কেটে মারাই কাজ সম্পন্ন করতে হবে। বাজার ধসের শঙ্কায় আছি।’
এলাকার কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছর ১০ বিঘা জমিতে গম চাষ করি। কিন্তু গত ছয় বছর ধরে গমের তেমন দাম পাইনি। তাই এবার ৪ বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছিলাম। বাকি জমিতে আবাদ করেছিলাম আলু। ব্যাপক আলু উৎপাদন হলেও প্রত্যাশিত দাম পাইনি। কিন্তু গমের দাম ভালো পাওয়ায় আনন্দিত আমি। এবারে প্রতি মণ গম বিক্রি করছি ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। গতবার যা মণ প্রতি বিক্রি করেছিলাম ৯০০ টাকায়।’
দুই বিঘা জমিতে গম চাষ করেছেন সদরের বেগুনবাড়ি এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এবারে গ্রামের কৃষকরা তেমন গমের আবাদ করেননি। আমি পরীক্ষামূলকভাবে দুই বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ভালো দাম পেয়েছি। এমন দাম পেলে প্রতি বছর গম উৎপাদন বাড়বে। আগামী মৌসুমে ১৩ বিঘা জমিতে গমের আবাদ করব।
আকচা গ্রামের কৃষক সুজাউদ্দৌলা বলেন, ‘গমের জন্য বিখ্যাত জেলায় গম চাষে আগ্রহ হারিয়েছিলেন চাষিরা। কারণ আমরা গমের উৎপাদন খরচ অনুযায়ী গমের দামে অখুশি ছিলাম। সেচ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক সব মিলিয়ে প্রতি বিঘাতে গম উৎপাদনে খরচ হয় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু গত বছর গম বিক্রি করে বিঘা প্রতি লাভ করেছি মাত্র তিন হাজার টাকা। তাই এ বছর গম চাষ করিনি। তবে এবারে গমের দাম ভালো পাচ্ছে কৃষকরা। এমন দাম আগামীতেও পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আবারও গমের চাষ করব।’
গমের পাইকারি ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, ‘ধরন বুঝে কাঁচা গম কৃষকের মাঠ থেকে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত কিনছি আমরা। গমের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা আনন্দিত।’
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় গমের চাষ ভালো। জেলায় ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আবাদ হয়েছে ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে। তবে চাষে লক্ষ্যমাত্রা ব্যহত হলেও উৎপাদন ভালো হয়েছে।’
এখন পর্যন্ত কত টন গম মাড়াই হয়েছে তার হিসাব জানাতে পারেননি তিনি।
আগামী বছর গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ব্যহত হবে না জানিয়ে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি এ বছর দাম ভালো পাওয়ায় আগামীতে কৃষকরা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে গম চাষে আগ্রহ দেখাবে।’
তবে প্রশাসনের প্রতি গম চাষিদের আহ্বান, প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করা যেন সিন্ডিকেট চক্রের কবলে পড়ে কৃষকদের স্বপ্ন নষ্ট না হয়। ভালো দাম পেলে কৃষকরা আগামীতে গম চাষে আরও উদ্বুদ্ধ হবে। জেলায় এবারের চেয়ে দ্বিগুণ গম চাষ হবে বলেও প্রত্যাশা কৃষকদের।