
মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা ॥
কাঠের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও দ্রুত বর্ধনশীল হিসাবে আকাশি, ম্যানজিয়াম, রাবার, ইউক্যালিপটাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির ভিনদেশি গাছের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি ও প্রাণবৈচিত্র্য। মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও কৃত্রিম বনায়নে, বাড়িঘরের আশপাশে রোপিত হচ্ছে এসব গাছ। এসব গাছে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষকরাই অভিযোগ তুলেছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দ্রুত বর্ধনশীল ও মুনাফা লাভের আশায় গত কয়েক যুগ ধরে বিদেশি প্রজাতির এসব গাছ দিয়ে বনায়নের হিড়িক শুরু হয়। সিলেট অঞ্চলের সংরক্ষিত বনাঞ্চল, রাস্তার ধারে সামাজিক বনায়ন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে রোপিত আগ্রাসি প্রজাতির এসব বিদেশি গাছের কৃত্রিম বনায়ন সমূহ শোভা পাচ্ছে। এতে কৃষি, মৎস্য চাষাবাদে ক্ষতি ছাড়াও পশুপাখির খাদ্য তৈরি না হওয়ায় পরিবেশেরও ক্ষতি করছে। রাস্তার পাশে সামাজিক বনের এ সব গাছের ছায়ায় পড়ে ধানগাছে রোগ ও পোকার আক্রমণ মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে জমিতে ধানগাছ মারা যাচ্ছে। রাস্তার ধারের কমলগঞ্জের কৃষক মোবাশ্বির আলী, তোয়াবুর রহমান, ফটিকুল ইসলাম বলেন, আকাশমনি, ম্যানজিয়াম এসব গাছগাছালি চাষাবাদে কৃষিজমি বিনষ্ট, মৎস্য চাষাবাদে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাছের ছায়ায় ধানি জমির। চাষাবাদকৃত ধানগাছ কেটে গরু-মহিষকে খাওয়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। কৃষকরা বলেন, আকাশি গাছের ছায়ায় ধান থেকে শুরু করে কোনো ধরনের চাষাবাদ সম্ভব হয় না। একইভাবে মৎস্য খামারের পাশে এই সব গাছের কারণে মৎস্য চাষাবাদেও ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। মৌলভীবাজারের বন্যপ্রাণী বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, আগ্রাসি প্রজাতির গাছগাছালি পশুপাখির খাবার তৈরি করে না এবং ব্যাপক বিস্তারে অন্য গাছগুলোর সালোক সংশ্লেষণ-প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। যে কারণে জীববৈচিত্র্যের জন্য আগ্রাসি প্রজাতির গাছ খুবই ক্ষতিকর। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মো. শামসুদ্দীন আহমদ বলেন, আকাশি, ইউক্যালিপটাস গাছের ছায়ায় ধানগাছের পাতা মোড়ানো রোগসহ বিভিন্ন ছত্রাকে আক্রান্ত করে। এসব রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কীটনাশক অথবা বালাইনাশক ব্যবহারে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, আকাশি গাছের পাতা ঘন, এমনকি সূর্যের আলো মোটেও পড়ে না। এগুলো প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর। গাছের পাতা পড়ে কৃষিখেত বিনষ্ট হয়। ক্ষতিকর এ সব গাছ রোপণ থেকে সবাইকে নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। কমলগঞ্জের রাজকান্দি বনরেঞ্জ কর্মকর্তা আবু তাহের আকাশমনি গাছের ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলেন, এখন এসব গাছ রোপণ এবং সরকারি নার্সারিগুলোতে আকাশমনি, ম্যানজিয়াম গাছের চারা উৎপাদন সম্পূণ রুপে বন্ধ করা হয়েছে।