
বরিশাল থেকে সংবাদদাতা ॥
দেড় যুগ সৌদি আরবে ছিলেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার পূর্ব ধামসর গ্রামের আল মামুন। মরুর দেশে থাকাকালে দেখেছেন সেখানকার খেজুর বাগান। তখন থেকেই মনে সাধ জাগে বাড়ি ফিরে আরবের খেজুরের চাষ করবেন।২০১৪ সালে দেশে ফেরেন আল মামুন। পূর্ব ধামসর গ্রামে নিজস্ব ৩০ শতাংশ জমিতে রোপণ করেন সৌদি থেকে আনা আজোয়া, আম্বার ও মরিয়মসহ সাত প্রকারের খেজুরের বীজ। মামুন জানান, বীজ রোপণ করলেও মনে সন্দেহ ছিল চারা হবে কিনা? মামুনের শঙ্কা কাটিয়ে বীজ থেকে চারা হয়। যথাযথ পরিচর্যায় বড় হতে থাকে চারা। মাত্র চার বছরের মাথায় চলতি বছর ফলনও হয়েছে মামুনের খেজুর বাগানে। মামুন বলেন, ‘অ্যারাবিয়ান খেজুরের বাগান করার পর একসময় যেসব বন্ধু-স্বজন তার উদ্যোগকে ‘পাগলামি’ বলে টিপ্পনী কাটতেন, এখন ফলন আসার পর তারাও এ খেজুর বাগান করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’ মামুনের মতে, স্থানীয় শিক্ষিত যুবকদের স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে তার খেজুর বাগান।আল মামুনের খেজুর বাগান সম্পর্কে উজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকির তালুকদার বলেন, ‘মরুর খেজুর চাষে মামুনের সফলতার মাধ্যমে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে এ খেজুর উৎপাদনের উজ্জ্বল সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। আবাদ বৃদ্ধি পেলে গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে।’আরব দেশগুলোতে সুস্বাদু ফল খেজুরের ব্যাপক উৎপাদন হয়। স্বাদ ও খাদ্যগুণ ছাপিয়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিশেষ শ্রদ্ধা জড়িয়ে আছে এই খেজুরের প্রতি। বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে এ খেজুর মানুষ খাচ্ছেন এবং এর রয়েছে বিশেষ জনপ্রিয়তা। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) কৃষি তথ্য বিভাগের অধ্যাপক আ. ক. ম. মোস্তফা জামান বলেন, ‘অ্যারাসিয়ে (ARECACEAE) পরিবারের ফিনিক্স (PHOENIX) নামের অ্যারাবিয়ান খেজুর জাতের উদ্ভিদ প্রধানত মরু অঞ্চলে আবাদ হয়। উচ্চ তাপমাত্রা আর কম আর্দ্রতা এ খেজুর চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। তবে আরবের মরুভূমি ছেড়ে বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই এই সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর ও উচ্চমূল্যের খেজুরের আবাদ হচ্ছে। বাংলাদেশেও অ্যারাবিয়ান খেজুরের আবাদে সফলতা এসেছে। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার জনৈক আব্দুল মোতালেব তার জমিতে সৌদি আরব থেকে আনা বীজ থেকে অ্যারাবিয়ান খেজুর আবাদে সফল হয়েছেন। ভালুকা ছাড়াও সিলেট, জামালপুর, দিনাজপুর ও যশোরের কিছু এলাকায় এই খেজুরের আবাদ শুরু হয়েছে। নার্সারির মাধ্যমে চারাও উৎপাদন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে অ্যারাবিয়ান খেজুরের মধ্যে আজোয়া আম্বার, জিরজুল, বারাহি ও মরিয়ম জাতের খেজুরের সফল আবাদ হচ্ছে।’ অধ্যাপক আ. ক. ম. মোস্তফা জামান বলেন, বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে অ্যারাবিয়ান খেজুরের আবাদ উপযোগী বিপুল জমি রয়েছে। কিন্তু এ খেজুর আবাদে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। বরিশাল অঞ্চলের মাটি ও জলবায়ু অ্যারাবিয়ান খেজুর চাষের উপযোগী কিনা তার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পবিপ্রবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে ২০১৮-১৯ সালে বিশ্ববিদালয়ের অর্থায়নে পরীক্ষামূলকভাবে প্রদর্শনী খামারে অ্যারাবিয়ান খেজুরের চারা রোপণ করা হয়। প্রদর্শনী প্লটে অ্যারাবিয়ান খেজুরের চারাগুলো অত্যন্ত সুন্দরভাবে বেড়ে উঠছে। পবিপ্রবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ২০২২-২৩ সালের মধ্যে প্রদর্শনী প্লটের খেজুরগাছগুলোতে ফলন শুরু হবে। চারাগুলো সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার কারণে কৃষিতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের জলবায়ু ও মাটি অ্যারাবিয়ান খেজুর চাষের জন্য উপযোগী। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘সরকারিভাবে অ্যারাবিয়ান খেজুর চাষের নির্দেশনা না থাকায় কৃষি বিভাগ এ ব্যাপারে এখনও কোনো উদ্যেগ নেয়নি। গবেষণার মাধ্যমে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সফল হলে কৃষি বিভাগও এ অঞ্চলে অ্যারাবিয়ান খেজুর চাষের সুযোগ ও সম্ভাবনা কাজে লাগাবে।’