
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ মৌসুমে জেলায় গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ১৪০ হেক্টর জমি। চাষ হয়েছিল ৪ হাজার ৪০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে ৩৭৫ হেক্টর জমির গমখেত ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়। এরপর গম চাষ না করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা হয়। কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান, উঠান বৈঠক, অনানুষ্ঠানিক সভায় ও লিফলেট বিতরণ করে গম চাষকে না বলা হয়। এরপরই জেলায় গমের আবাদ অনেকটাই কমে যায়। ২০১৬-১৭ মৌসুমে আবাদ হয় ৫৩০ হেক্টর জমিতে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে আবাদ হয় মাত্র ৬৮ হেক্টর জমিতে। ২০১৮-১৯ মৌসুম থেকে জেলায় গমের আবাদ অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে। গত ২০২০-২১ মৌসুমে আবাদ বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪৫ হেক্টর জমি। চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭৪৫ হেক্টর জমি। কিন্তু আবাদ হয়েছে মাত্র ৪৯০ হেক্টর জমিতে।
গম গবেষকেরা বলেন, গমের ব্লাস্ট একটি ক্ষতিকর ছত্রাকজনিত রোগ। গমের শিষ বের হওয়া থেকে ফুল ফোটার সময়ে তুলনামূলক গরম ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া থাকলে এ রোগের আক্রমণ দেখা দিতে পারে। ১৯৮৫ সালে ব্রাজিলে প্রথম এ ছত্রাকের আক্রমণ হয়। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল ও ভোলায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ওই বছর সাতটি জেলার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির গম ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে নষ্ট হয়।
যশোর আঞ্চলিক কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৬ সালে গমের ব্লাস্ট রোগটি আমাদের দেশে একেবারেই নতুন ছিল। রোগটি দেখা দেওয়ার পর গবেষণা শুরু হয়। এরপর বারি গম ৩৩ নামে নতুন ব্লাস্ট রোগপ্রতিরোধী একটি জাত উদ্ভাবন করা হয়। এরপর ব্লাস্ট রোগপ্রতিরোধী আরেকটি জাত ডব্লিউএমআরআই গম ৩ উদ্ভাবন করা হয়। এ বছর বেশির ভাগ জমিতে বারি গম ৩৩ আবাদ হয়েছে।’
কৃষি বিভাগের বিভিন্ন উদ্যোগের পরও গম আবাদ তেমন বাড়েনি। বাঘারপাড়া উপজেলার আগড়া গ্রামের কৃষক আবদুল মজিদ বলেন, ‘কৃষি বিভাগ থেকে বীজ, সার ও কীটনাশক পেয়ে গত বছর ১২ বিঘা জমিতে বারি ৩৩ জাতের গমের চাষ করে ১৫০ মণ গম পেয়েছিলাম। পাশাপাশি জমিতে গমের চাষ না থাকলে ইঁদুর, পাখি ও গরু-ছাগলে গমের ক্ষতি করে। কৃষকেরা এখন তেমন গম চাষ করেন না। ক্ষতির কারণে আমি এবার কৃষি প্রণোদনা নিইনি। গম চাষও করিনি।’
মনিরামপুর উপজেলার ভোজগাতী গ্রামের কৃষক রাসেল উদ্দীন বলেন, ‘আমি এবার দুই বিঘা জমিতে বারি গম ৩৩ জাতের গমের চাষ করেছি। গমের বীজ বপনের সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিতে খেত তলিয়ে গিয়েছিল। এবার গমে কোনো ব্লাস্ট রোগ লাগেনি। গম কেটে মাড়াই করছি। এবার ২৪-২৫ মণ গম হবে। বাজারে এবার গমের দাম ভালো।’ তিনি বলেন, ধান চাষ তুলনামূলক সহজ। ধানে দামও ভালো। কিন্তু গম চাষ একটু কঠিন। পাশাপাশি অনেক জমিতে গমের চাষ না থাকলে ইঁদুর, পাখি ও গরু-ছাগলে গমের ক্ষতি করে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) দীপঙ্কর দাশ বলেন, বর্তমানে ব্লাস্টপ্রতিরোধী গমের চাষ শুরু হয়েছে। এ জেলায় আবার গমের চাষ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে ভারী বৃষ্টিতে পানি জমে অনেক গমখেত নষ্ট হয়ে যায়।