
ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ ফল কমলা আর মাল্টা ‘অভিজাত শ্রেণির’ ফল হিসেবে ক্রেতাদের কাছে অবস্থান করে নিয়েছে। তবে কমলা ও মাল্টার মতো একই ধরনের গুণাগুণ থাকলেও বাতাবিলেবু বা জাম্বুরা অনেকটাই পিছিয়ে আছে। জাম্বুরা এখনো গ্রামীণ জনপদেই বেশি জনপ্রিয়। এর গুণাগুণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় ক্রেতারা জাম্বুরা এক পাশে সরিয়ে কমলা অথবা মাল্টার দিকেই হাত বাড়ান।
জাম্বুরা সব শ্রেণির ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চেষ্টা করছে। এর অংশ হিসেবে মৌলভীবাজারের জুড়ীর স্থানীয় বাছাই করা দুটি জাতের জাম্বুরার চারা তৈরি করা হয়েছে। সেই চারা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই জাত দুটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—এটি রসাল, মিষ্টি, রং তীব্র লাল ও বাকল ছাড়ানো বেশ সহজ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার হায়াছড়া, রূপাছড়া, শুকনাছড়া, কচুরগুলসহ টিলাভূমিতে উৎপাদিত মিষ্টি ও রসাল ফল হিসেবে জাম্বুরার সুনাম আছে। বাতাবিলেবু বা জাম্বুরা স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে ‘মাতু’ নামে পরিচিত।
চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় এই এলাকার জাম্বুরার কদর রয়েছে। অনেক দিন ধরেই মৌলভীবাজারের বাইরেও বেশ কয়েকটি জেলায় ট্রাকবোঝাই করে জাম্বুরা যাচ্ছে।
দেশের সব জেলায় জুড়ীর স্থানীয় জাতের জাম্বুরা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১০-১২ বছর আগে কাজ শুরু করেন কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও লেবুজাতীয় ফলের গবেষক আজমত উল্লাহ। তিনি জুড়ীর ১০টি জাম্বুরার জাত বাছাই করেন। পরে ওই জাতগুলোর মধ্য থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হায়াছড়ার ইব্রাহীম মিয়ার বাগান থেকে দুটি জাত নির্বাচিত করা হয়।
২০২১ সালে এই দুটি জাতের গাছ থেকে সায়ন (কলমের উপযোগী ডাল) সংগ্রহ করে চারা তৈরি করা হয়েছে। লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় জেলার কুলাউড়া হর্টিকালচার কেন্দ্রে প্রাথমিকভাবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার চারা প্রস্তুত করা হয়েছে।
কাজটির তত্ত্বাবধান করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী। এ দুটি জাতের নামকরণ করা হয়েছে জুড়ী বাতাবিলেবু-১ ও জুড়ী বাতাবিলেবু-২। জুড়ী বাতাবিলেবু-১ জাতের একটি জাম্বুরার ওজন এক থেকে দুই কেজি ও জুড়ী বাতাবিলেবু-২ জাতের একটি জাম্বুরার ওজন এক থেকে দেড় কেজি। দুটি থেকেই সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ফসল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, কৃষি বিভাগ সারা দেশে এ দুটি জাতের জাম্বুরা সম্প্রসারণের জন্য অন্যান্য হর্টিকালচার কেন্দ্রেও চারা তৈরি করবে। ভবিষ্যতে তা নার্সারিতে করারও উদ্যোগ নেওয়া হবে, যেন সহজে সাধারণ মানুষের মধ্যে জাম্বুরার এই জাত পৌঁছে দেওয়া যায়। এর মধ্যে গত ১২ মে কুলাউড়া হর্টিকালচার কেন্দ্র থেকে জুড়ী, কুলাউড়া ও বড়লেখার ৩৫ জন কৃষকের মধ্যে এ দুই জাতের নতুন উৎপাদিত চারা বিতরণ করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী প্রথম আলোকে বলেন, জুড়ীর জাম্বুরার সুনাম আছে। স্থানীয় এই জাত সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে প্রায় ১০-১২ বছর ধরে কাজ চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দুটি জাত নির্বাচন করা হয়েছে। এ দুটি জাতের রং গাঢ় লাল, রসাল, স্বাদ মিষ্টি, সুন্দর ঘ্রাণ। চামড়া পাতলা ও বীজ কম। জাম্বুরা কমলা ও মাল্টার মতো ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ পুষ্টিকর ফল। জাম্বুরা সবার কাছে পৌঁছে দিতে এই জাতের চারা তৈরি করা হয়েছে।
কাজী লুৎফুল বারী বলেন, মৌলভীবাজারের সব কটি উপজেলায় চারা দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য হর্টিকালচার কেন্দ্রের মাধ্যমে সারা দেশে এ দুটি চারার সম্প্রসারণ করা হবে। জাম্বুরা জনপ্রিয় করা গেলে সহজে ভিটামিন সি–এর জোগান মিলবে। সেই সঙ্গে কমলা ও মাল্টার আমদানি কমবে। এতে দেশের কৃষকেরা লাভবান হবেন।