
পুনর্ভবা নদীর পানি বেড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে প্রায় আড়াই হাজার বিঘা জমির পাকা ধান তলিয়ে গেছে। এমন বিপর্যয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
গোমস্তাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন রাধানগরের কুজাইন বিলে বছরে একবার ধান ও বাকি সময় মাছ চাষ হয়।
কৃষকরা জানান, কয়েক বছর ধরে ধান ঘরে তোলার আগে উজানের পানিতে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বছর এখন পর্যন্ত অর্ধেক জমির ধান কাটা হয়েছে। অনেকেই ধান কেটে আঁটি করে জমিতে রেখেছিলেন। পানিতে সব ভেসে গেছে। আর যেসব ধান এখনও কাটা হয়নি সেগুলো ডুবে গেছে।
ভেসে যাওয়া ধানই নৌকায় করে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা।
কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘গত বছরও পানি অ্যাসাছিল (এসেছিল)। তবে সে বার পানি কম থাকায় ধানের ক্ষতি একটু কম হয়্যাছিল (হয়েছিল)। ধানও কেটে তুলতে প্যারাছি (পেরেছি)। এবার ধান একবারই (পুরোপুরি) ডুব্যা গেছে। কিচ্ছু পাব না।’
রাধানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্ধেকের বেশি জমির ধান কাটা শেষ হয়ে গেছিল। বাকি জমির ধান কাটা চলছিল। হঠাৎ করেই শনিবার থেকে পুনর্ভবা নদীতে পানি বাড়তে থাকে।
‘একপর্যায়ে পানি পুনর্ভবার শাখা নদী জামদাড়া নালায় ঢোকে। জামদাড়া উপচে পানি কুজাইনে ঢুকে পড়ে। এতে কেটে রাখা ধানগুলো ভেসে গেছে। তবে কার কার ধান ভেসে গেছে সেটা এখন বোঝার কোনো সুযোগ নেই। ধানগাছগুলোও এখন পানির নিচে।’
মতিউর জানান, তার নিজেরই ২২ বিঘা জমির ধান ভেসে গেছে। মাড়াই করার জন্য ধান কেটে জমিতে রেখেছিলেন। তার মতো দেড় থেকে দুই হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রোকনপুর, ইসলামগঞ্জ ও চেরাডাঙ্গার কৃষকদের।
গোমস্তাপুরের কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার জানান, বিল কুজাইনে প্রায় আড়াই হাজার বিঘা জমির ধান ডুবে গেছে। এতে প্রায় দেড় হাজারের মতো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কয়েক বছর ধরেই এমন ঘটনা ঘটছে। ধান ঘরে তোলার ঠিক আগে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
তানভীর বলেন, ‘গত বার ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দেড় হাজার কৃষককে উচ্চ ফলনশীল ধানবীজ ও সার প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। তারা সেই বীজ লাগিয়েছিলেন। ফলনও ভালো হয়েছিল। তবে ধান ঘরে তোলার আগেই বিপর্যয় ঘটে গেল।
‘বিল কুজাইনে বছরে একটা ফসলই হয়। ধানটা ভালোও হয়। ধান ছাড়া এখানে অন্য ফসল করার খুব বেশি সুযোগ নেই। ধান উঠলে বাকি সময়টা মাছ চাষ হবে।’
ক্ষতি কতটা পুষিয়ে নেয়া যাবে সে বিষয়ে তানভীর বলেন, ‘যাদের ধান ভেসে গেছে তারা ধানগুলো নিয়ে যাচ্ছেন। আর যাদের এখনও কাটা হয়নি তারা পানি কমলে হয়তো শুধু ওপরের অংশটা কেটে নেবেন। তবে কতটা রিকভার করা সম্ভব হবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না।
‘এ বছরও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের প্রণোদনার বীজ ও সার দেয়ার চেষ্টা করা হবে।’