
কুড়িগ্রামে জেলায় শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। যে সময় কৃষকের মুখে হাসি ফোটার কথা, সে সময় অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
কুড়িগ্রামের ১৬টি নদনদীর পানি বাড়ায় প্রায় পাঁচ শতাধিক নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ পাকা ধান এবং খড় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার ভোর থেকে রোববার পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টায় ২০৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বৃষ্টিতে শত শত বিঘা জমির পাকা ধান তলিয়ে গেছে।
সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের পানাতি পাড়া গ্রামের কৃষক উত্তম কুমার বলেন, ‘আমার এক বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। আধা পাকা ধান কাটছি। প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই ফসলে সেই খরচ উঠবে না।’
একই এলাকার চাষি অমিদাস বলেন, ‘প্রায় ৫৫ হাজার টাকায় একটি গরু বিক্রি করে ১০ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছি। অকাল বৃষ্টিতে এক বিঘার ওপর বোরো আবাদ তলে গেছে। এখন খরচ কীভাবে উঠবে সেটা মালিক (ঈশ্বর) জানে।’
শুলকুর বাজার ছড়ার পাড়ের কৃষক সইদুল ইসলাম বলেন, ‘এক বুক পানিতে নেমে ধান কাটতে হচ্ছে। দুই বিঘা বোরো ধান পানির নিচে। কামলা পানিতে নেমে ধান কাটে না। মজুরিও চায় বেশি। তাই নিজেরাই কাটছি।’
একই এলাকার কৃষক মকবুল মিয়া বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদে খরচ গেছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। আগে এই জমিতে ধান পাইতাম ২৫/২৮ মণ । এবার পানিতে ডুবে থাকা ধান ১২/১৪ মণের ওপর হবে না। খরচও উঠবে না। খড়ের অবস্থা খারাপ। গরুর খাবারও সংকট হবার শঙ্কা আছে।’
কৃষানি শিল্পী বেগম বলেন, ‘পানিত ডুবে থাকা ধান কেটে শুকাতে পাচ্ছি না, রোদ নাই। খড় স্যাঁত স্যাঁত হয়ে যাচ্ছে। ধান ভেজা থাকলে নষ্ট হয়ে যায়।’
হলোখানা ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘অকাল বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বোরো, বাদাম, পেঁয়াজসহ সবজিক্ষেত তলিয়ে গেছে। ঋণ করে অনেক কৃষক আবাদ করলেও ক্ষতির মুখে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।’
প্রান্তিক এসব কৃষকের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর সবুর মিয়া বলেন, ‘আসানির প্রভাবে সারা দেশের ন্যায় কুড়িগ্রামেও বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত তিন দিনে ২০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুই-তিন দিন উত্তরাঞ্চলে বজ্রসহ ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ১৩ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে সদরে ২৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। বাকি ধানগুলো এখনো জমিতে রয়েছে।
‘এসব ধান নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন কৃষক। গত তিন দিন অফিস বন্ধ থাকায় এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কাছে বোরো ধান জলমগ্ন হওয়ার কোনো পরিসংখ্যান নেই।’