
আলীপুর মৎস্যবন্দরে ফরিদ মাঝিছবি।
১২ বছর ধরে সাগরে মাছ ধরেন লক্ষ্মীপুরের রামগতির জেলে ফরিদ মাঝি। গত বুধবার তাঁর জালে ধরা পড়েছে ৯৬ মণ ইলিশ। আগেও একবার এক টানে ১৬০ মণ ইলিশ ধরেছিলেন ফরিদ।
কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে কয়েক দিন ধরে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলে আর ব্যবসায়ীদের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় মাছের মোকাম আলীপুর মৎস্যবন্দর। গত বৃহস্পতিবার এই মৎস্য অবতরণকেন্দ্রেই ফরিদ মাঝির সঙ্গে দেখা। মাছভরা ট্রলার নিয়ে বন্দরে এসেছিলেন তিনি। মেপে দেখা গেছে, তাঁর জালে ধরা পড়া ইলিশের পরিমাণ ৯৬ মণ। ৩৫ লাখ টাকায় সেই মাছ বিক্রি হয়েছে।
রামগতির সালাহউদ্দিন কোম্পানির ট্রলার ‘এফবি নূর-১’ নিয়ে গত বুধবার গভীর সাগরে যান ফরিদ মাঝি। সকাল সাতটায় জাল ফেলেন তাঁরা। বেলা তিনটায় জাল তোলার পর দেখেন, প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। কথায় কথায় মাঝির কাছে জানতে চাই, কী দেখে বোঝেন কোথায় জাল ফেললে বেশি মাছ ধরা পড়বে? বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরা জাইল্যারা আমরা বেকগুনই সাগরের পানি দেখলেই বুঝি যাই, কোন জায়গায় মাছ পড়বে। বুঝেই আমরা জাল ফালাই। দেখা যায়, তখন মাছ ভালাই পড়ে। তবে এই হিসাব সব সময় আবার মিলেও না।’
মাঝসাগরে উঁচু উঁচু ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে ফেরার পথে ট্রলারের ইঞ্জিনটা বিকল হয়ে গেল
গভীর সাগরে ঝড়ের কবলে পড়েছিলেন এই জেলেরা।
গভীর বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়েছিল ‘মায়ের দোয়া’। উঁচু উঁচু ঢেউয়ের তোড়ে মাঝিমাল্লাসহ মাছ ধরার ট্রলারটা একসময় ভারতের জলসীমাতেও ঢুকে পড়ে। ঝড় থামলে তীরে ফেরার পথে বিকল হয়ে যায় ট্রলারের ইঞ্জিন।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার হোগলপাতি গ্রামে আমার বাড়ি। ৫৫ বছরের জীবনে ৩৭ বছর সাগরেই কাটায়া দিলাম। কত মানুষের সঙ্গেই না ট্রলারে উঠছি। কত ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সামনে পড়ছি। একসময় নিজেই মাঝি হইলাম, তখন মহাজনের ট্রলার নিয়া সাগরে যাইতাম। দুই বছর হয় নিজের একটা ট্রলার হইছে। এখন আমার সঙ্গে সাগরে মাছ ধরে তিন ছেলে—মানিক ফকির, হেলাল ফকির আর দুলাল ফকির। এই কাজই আমাদের রুটিরুজি।
কয় দিন আগে সরকারের মাছ ধরার দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হইছে। তার আগে থেকেই অবশ্য আমরা ট্রলার রেডি করছি। প্রতিবার মৌসুম শুরুর আগেই ট্রলারে কাজ করা লাগে। পরিকল্পনা মতো গত ২৯ জুলাই ভোরে তিন ছেলেসহ নয়জন ট্রলারে উঠি। বাড়ি থেকে প্রথমে যাই বরগুনার পাথরঘাটার চরদোয়ানী বাজারে। এই বাজার সামুদ্রিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, এই কারণে সমুদ্রগামী ট্রলারের যাবতীয় জিনিসপত্রও এখানে পাওয়া যায়। চরদোয়ানী বাজার থেকে চাল, ডাল, তেলসহ সাত দিন চলার মতো জিনিসপত্র কিনি। এরপর আরও অনেক ট্রলারের মতো আমরাও সাগরের উদ্দেশে ঘাট ছেড়ে যাই।