
ময়মনসিংহের নান্দাইলে গম কাঁটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। এবছর গমের ভাল ফলন হওয়ায় খুশি উপজেলার কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয় ও সঠিক সময়ে কৃষকরা জমিতে বীজ বপন করতে সক্ষম হওয়ায় এ উপজেলায় এবার গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে পুরোদমে গম কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে।যেন কৃষকদের দম ফেলার সময় নেই। সকাল থেকে রাত অবধি গম কাঁটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক।
মাঠের দিকে তাকালে দেখা যায়, গমের পাকা শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। সোনালী রোদে চিকচিক করছে প্রতিটি গমের শীষ। আর পাকা শীষের সাথে চাষির মন ও শরীরও দোল খাচ্ছে। মাঠের দিকে তাকিয়ে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে হাঁসি। এযেন এক অনাবিল তৃপ্তির হাঁসি। কৃষকের স্বপ্ন মিশে গিয়েছে সোনালী গমের শীষে।
রবি শস্যের মধ্যে অন্যতম একটি লাভজনক আবাদ হচ্ছে গম। বর্তমানে গমের বাজার ভালো থাকায় গম চাষে লাভের আশা করছেন চাষিরা।
ময়মনসিংহের নান্দাইলে এ বছর গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর গমের ফলন বেশি ভালো হয়েছে। গম ক্ষেতে কোনো ধরণের রোগ-বালাই না হওয়ার কারণে বিঘা প্রতি আগের তুলনায় ফলন বেড়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে নান্দাইলে ৭৫ হেক্টর জমিতে কৃষক গম চাষ করেন। অধিকাংশ জমিতে কৃষক উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে পরিচিত বারি-৩০,৩২ ও ৩৩ রোপণ করেছেন। এছাড়া বারি-২৫, ২৭ ও ২৮ জাতের গমও চাষ করা হয়েছে। গমের ১০টি প্রদর্শনী প্লটও রয়েছে।
অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষি বিভাগের সঠিক তদারকি ও পরামর্শে গম ক্ষেতে কোনো রোগবালাই ছিল না। তাই গমের বাম্পার ফলন হয়েছে।
উপজেলার বীরবেতাগৈর, চরবেতাগৈর, আচারগাঁও, শেরপুর, নান্দাইল, সিংরইল, গাঙ্গাইল, জাহাঙ্গীরপুর, মুশুলী ইউনিয়নসহ অন্যান্য ইউনিয়নেও বিক্ষিপ্তভাবে গমের আবাদ হয়েছে। তবে চরকামট খালী, চরউত্তরবন্দ, চরকোমরভাঙা, চরভেলামারী, চরলক্ষিদিয়া, বীরকামট খালী, এবং হাটশিরার চরাঞ্চলে গমের আবাদি বেশী হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়,উপজেলার সর্বত্রই গম কাটা এবং মাড়াইয়ে ব্যস্ত রয়েছেন কৃষক। গমক্ষেতে বা বাড়ির উঠানে মেশিনের মাধ্যমে গম মাড়াই করছেন তারা। কৃষক-কৃষাণী, বৃদ্ধ, শিশু সবাই গম নিয়ে মেতেছেন।
উপজেলার বীরকামট খালী গ্রামের গমচাষি ইলিয়াস কাঞ্চন, আ: মতিন, বাবুল, ইসলাম উদ্দিন,আ:সামাদ, আবু তাহের, ইদ্রিসসহ অনেকেই জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গমের উৎপাদন অনেক ভালো হয়েছে। বিগত সময়ের চেয়ে এবার গমের দানা খুব ভালো এসেছে।প্রতিটি শীষ অনেক বড় হয়েছে। যদি আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত গমের অনুকূলে থাকে ও গমের বাজার ভালো থাকে তাহলে চাষিরা লাভবান হবেন।
গমচাষে বীজ, কীটনাশক ও দিনমজুরসহ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ হলেও বিঘাপ্রতি ৯ থেকে ১০ মণ গম পাবেন বলে জানান চাষিরা।প্রতি মণ গম বর্তমান বাজার দর ১ হাজার ২ শত টাকারও বেশি, তাই বিঘা প্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকার গম বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান কৃষকেরা।
গম চাষ একটি অধিক লাভজনক আবাদ।গম চাষে তেমন পানি, সার, কীটনাশক, বালাইনাশক ও নিড়ানীর প্রয়োজন হয় না এতে খরচ অনেক কম। আর কম পরিশ্রমে অধিক লাভ করা যায়। এছাড়াও গমে পোকা-মাকড়ের আক্রমনও তেমন একটা হয় না। গম গাছ জ্বালানি ও বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আমিনুল হক বলেন, গত বছরের চাইতে এবছর হেক্টরপ্রতি ফলন বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে। বাজার দর ও ফলনও ভালো হয়েছে। তাই চাষিরা অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি লাভবান হবেন। চাষিরাও এবার আশাবাদী।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান দৈনিক নয়া শতাব্দীকে বলেন, চলতি মৌসুমে গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম পেয়ে কৃষক খুশী। এইবার গমে তেমন উল্লেখ্যযোগ্য কোন রোগ-বালাইয়ের আক্রমন হয়নি। চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি প্রায় ৩.৩ টন হারে ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।